দরজাটা খুলে দাও
সুজিত চট্টোপাধ্যায়
আমাকে একটু এই ঘরের বাইরে নিয়ে যেতে পারো।
ঘরের চার দেওয়াল আর খাট বিছানা আসবাবে দখল হয়ে যাওয়া এই ছোট্ট মেঝেটির বাইরে নিয়ে যেতে পারো একটিবার, কেউ ?
পঁচিশ কোটি বছর মাটির নিচে চাপা পরে থাকতে থাকতে সবুজ গাছও হয়ে যায় পাথর। ফসিল।
কেউ আছো, খুলে দাও না বন্ধ দরজাটা।
আমি যে পারিনা। ছিটকিনি অব্দি হাত যে পৌঁছাতে পারেনা আমার।
খুলে দাও না গো। আমি একবার বাইরে যাবো। এই ঘরের বাইরে।
ওই গাছের কাছে। যেখানে খেলা করছে পাখির দল।
ওই নদীর পাড়ে।
দুপায়ে ছপছপ শিশু ঢেউ মাড়িয়ে মাড়িয়ে হারিয়ে যাবো আনন্দ উচ্ছ্বলতায়।
কিংবা অন্তহীন টানটান শুয়ে থাকা এমাথা থেকে ওমাথা রেললাইন পেড়িয়ে ,
মন্দিরে টাঙানো ঘন্টার দড়িতে অশক্ত হাতে টান দিয়ে আওয়াজ তুলবো , ঢংঢং ঢংঢং।
আর সেই সবুজ কচিকচি ঘাসে ঢাকা খেলার মাঠ,
আচ্ছা, ওখানে কী এখনো খেলা করে
গোপাল দাদা আর মানু দিদিরা বিকেলে ?
আমি দেখবো, আমি খেলবো,,, ওগো,, শুনছো,,
দাওনা গো , দরজাটা খুলে। দাওনা।
কতদিন সূর্যের আলো গায়ে মাখিনি।
ঘরের কৃত্রিম আলো অসহ্য। একটু প্রকৃতির নির্মল বাতাসে বুক ভরিয়ে নিতে দাও। ঘরের কৃত্রিম বাতাস অসহ্য।
একঘেয়ে চেনা মুখ গুলোর বাইরে, অচেনা অজানা মানুষের মুখ গুলো দেখতে দাও।
দরজাটা খুলে দাও। আমি বাইরে যাবো।
সেই আগের মতো , টা টা বাই বাই করে , একটিবার , দাওনা এই দৈত্য দরজাটা খুলে।
আমি বেড়ু বেড়ু যাবো। আমি বেড়ু বেড়ু যাবো,,
আমার নতুন স্বপ্ন চোখে জগৎ দেখবো ,
দরজাটা খুলে দাও
আমি বাইরে যাবো ।